সিএ কী, কিভাবে পড়ব, কেন পড়ব
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৮
আমরা সবাই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি বা সিএ নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাই। কিন্তু সঠিক তথ্য ও গাইডলাইনের অভাবে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। তাই কিছু তথ্য আপনাদের জন্য নিচে উল্লেখ করেছি। যেমন, কী যোগ্যতা প্রয়োজন, কিভাবে পড়া
যায় এবং চাকরির কী সুযোগ রয়েছে।
সিএ কী?
চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্সি বা সিএ হলো অ্যাকাউন্টিং বা হিসাববিদ্যায় একটি আন্তর্জাতিক মানের পেশাগত দক্ষতার সনদ। দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এই সনদ দেয়। আর্টিকেলশিপ ও প্রি-আর্টিকেলশিপ এই দুই সেক্টরে ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
কেন পড়ব?
এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পেশাগত দক্ষতার সনদ। তাই সবসময়ই এই ডিগ্রিকে গুরুত্ব দেয়া হয়। সারাবিশ্বেই সিএ ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ বাড়ছে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশে ডিগ্রির চাহিদা বেশি। করপোরেট ও বহুজাতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ার কারণে বিশ্বব্যাপী সিএ ডিগ্রিধারী পেশাজীবীর চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। বাংলাদেশেও যথেষ্ট কাজের সুযোগ আছে।
কাজের ক্ষেত্র
দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগ, নিরীক্ষা বিভাগ, ট্যাক্স, আর্থিক প্রশাসন ইত্যাদি বিভাগে একজন সিএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
কয়টি ধাপ, কয় বছরে শেষ হয়?
সিএ কোর্সের মোট তিনটি লেভেল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ১। সার্টিফিকেট লেভেল, ২। প্রফেশনাল লেভেল ও ৩। অ্যাডভান্সড লেভেল।
সার্টিফিকেট লেভেলে পড়তে হবে সাতটি বিষয়। সব মিলিয়ে তিন থেকে পাঁছ বছরের মধ্যে সিএ ডিগ্রি অর্জন করা সম্ভব।
সার্টিফিকেট লেভেল, প্রফেশনাল লেভেল ও অ্যাডভান্সড লেভেলে নানা বিষয়ের ওপর পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে হয়।
শুরুটা কিভাবে করব?
সাধারণত শিক্ষার্থীকে আইসিএবি নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠান বা ফার্মের সাথে যুক্ত হতে হয়। যেসব ফার্মে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব যাচাই করা হয়। শিক্ষার্থীকে সেখানে হাতে-কলমে নিরীক্ষা-সংক্রান্ত কাজের সাথে যুক্ত হতে হবে। পরে ফার্ম থেকে আইসিএবিতে শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন করানো হয়।
দেশে অনেকগুলো সিএ ফার্ম রয়েছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটেও রয়েছে কিছু নিবন্ধিত ফার্ম। নতুন শিক্ষার্থী নেয়ার ক্ষেত্রে বেশিভাগ ফার্ম পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষায় মূলত মৌলিক হিসাববিজ্ঞান ও ইংরেজির ওপর দক্ষতা যাচাই করা হয়।
ফার্ম কী?
সিএ ডিগ্রি অর্জনের জন্য আইসিএবির নিবন্ধিত সিএ ফার্মে ভর্তি হতে হবে। প্রি-আর্টিকেলশিপ কর্মসূচিতে সরাসরি আইসিএবিতে ভর্তি হওয়া যায়। সিএ ফার্ম নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়।
পাস করা কি খুব কঠিন?
অনেকে মনে করেন, সিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বেশ কঠিন। ব্যবসা দুনিয়ার কাজের ধরন প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল বলে সিএ শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হতে হয়। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জকে যারা রোমাঞ্চকর
মনে করেন, তাদের জন্য পড়ালেখাটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। তিন-পাঁচ বছরের মধ্যে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইসিএবির সনদধারী চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শুধু আর্টিকেলশিপ শেষ করে সার্টিফিকেট লেভেল
পরীক্ষায় পাস করেও কাজ করা যায়। এছাড়া কোর্স সমাপনী ও পরীক্ষায় পাশের ওপর নির্ভর করে রেজিস্টার্ড অ্যাকাউন্টিং টেকনিশিয়ান (আরএটি) ও সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্টিং প্রফেশনাল (সিএপি) সনদ পাওয়ার সুযোগ আছে।
ভর্তির যোগ্যতা কী
১। এইচএসসি, স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর শেষে সরাসরি ফার্মে জয়েন করে আর্টিকেলশিপ শুরু করতে পারেন।
২। স্নাতক, স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর চলাকালীন সময়ে প্রি-আর্টিকেল কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়।
প্রি-আর্টিকেলশিপে ভর্তির শর্ত
১। কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি থাকতে হবে।
২। স্নাতক সম্মান ও প্রি-আর্টিকেল (এসএসসি ও এইচএসসি) মিলে ৮ পয়েন্ট এবং স্নাতক/স্নাতক সম্মানে ভর্তি থাকতে হবে।
৩। স্নাতকোত্তর ও প্রি-আর্টিকেল (এসএসসি ও এইচএসসি) মিলে ৬ পয়েন্ট এবং স্নাতক সম্মানে কমপক্ষে সিজিপিএ ২.২৫ থাকতে হবে।
সরাসরি আর্টিকেলে ভর্তির শর্ত
১। এইচএসসির পর (এসএসসি ও এইচএসসি) মিলে ৮ পয়েন্ট থাকতে হবে।
২। স্নাতক সম্মান ও প্রি-আর্টিকেল শেষে (এসএসসি ও এইচএসসি) মিলে ৬ পয়েন্ট এবং স্নাতক সম্মান ও প্রি-আর্টিকেলে কমপক্ষে সিজিপিএ ২.২৫ থাকতে হবে।
ভর্তি প্রক্রিয়া কী?
১। প্রথমে পছন্দ মতো ফার্ম সিলেকশন করে সেখানে সিভি জমা দিতে হবে (অনলাইনে বা সরাসরি)।
২। ফার্মের সিলেকশন প্রসেস শেষ হলে আপনাকে গাইড করবে।
৩। সিলেকশনের দুই-তিন মাস পর ২৮ হাজার ৪০০ টাকার মতো খরচে আইসিএবিতে নিবন্ধন করতে হবে (পে-অর্ডারসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে)।
ফার্মে যোগদানের মেয়াদ
১। এইচএসসির পর : ৪ বছর।
২। স্নাতক সম্মান/স্নাতক, স্নাতকোত্তরের পর : ৩ বছর।
ভর্তি প্রক্রিয়া
১। আইসিএবির ওয়েবসাইট থেকে পাস এডমিশন (PAS Admission) ফর্ম ডাউনলোড করে পূরণ করতে হবে।
২। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র- ২ কপি ছবি, সার্টিফিকেট, মার্কশিট, জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন, ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রত্যায়নপত্র, ভার্সিটি আইডি কার্ড জমা দিতে হবে।
৩। টাকা পে-অর্ডার করে আইসিএবিতে জমা দিতে হবে। নিবন্ধন ফি আট হাজার ৯০০ টাকা, সাবজেক্ট ইনরোল ফি দুই হাজার টাকা, বইয়ের খরচ ৩০০০ টাকা।
অগ্রগতি
১। স্নাতকের সাথে সাথে সার্টিফিকেট এবং প্রফেশনাল লেভেল পাশ করে এগিয়ে যেতে পারবেন।
২। ফার্মে জয়েন হবে স্নাতক সম্মান/স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষে (মেয়াদ সার্টিফিকেট লেভেল পাশ আড়াই বছর, প্রফেশনাল লেভেল পাশ ২ বছর)।
৩। অ্যালাউন্স সার্টিফিকেট লেভেল পাশ ১০ হাজার, প্রফেশনাল লেভেল পাশ ১৩ হাজার, প্রি-আর্টিকেলশিপ ১ বছরের অফার (চাকরির পাশাপাশি)।
শর্ত
১। প্রফেশনাল লেভেল পাশ করার ছয় মাসের মধ্যে ফার্মে যোগদান করতে হবে।
২। আইসিএবির ওয়েবসাইট থেকে ১ বছরের অফার ভর্তির (One Year Offer Admission) ফর্ম ডাউনলোড করে
পূরণ করতে হবে।
৩। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (সার্টিফিকেট, মার্কটিট, পরিচয়পত্র, প্রশংসাপত্র, পে-অর্ডার) জমা দিতে হবে।
৪। টাকা পে-অর্ডার করে আইসিএবিতে জমা দিতে হবে।
সিএ পাশ করতে ফার্মে তিন-চার বছর কাজ শিখতে হয় এবং ১৭টি সাবজেক্ট শেষ করতে হয়। প্রি-আর্টিকেলের সুবিধা হলো স্নাতকের পাশাপাশি আপনি ১ম ও ২য় লেভেল শেষ করতে পারবেন।
লেখক
মো: মেহেরাব হোসেন অপি
সিএ আর্টিকেলশিপ স্টুডেন্ট
আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা